ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে খুশি হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত সাগর আহমেদের (২১) বাবা তোফাজ্জল হোসেন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত সাগর আহমেদের বাবা ও মা। ছবি: সময় সংবাদ |
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে সাগরের বাড়িতে গেলে সময় সংবাদের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ দাবি জানান তোফাজ্জল হোসেন।
সাগর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে গিয়ে গত ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
স্বজনরা জানান, গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর বাবাকে ফোন করেন। সবার খোঁজখবর নিয়ে বিকাশে ১ হাজার টাকা দিতে বলেন। স্থানীয় নারুয়া বাজারে গিয়ে আধাঘণ্টা বাদেই টাকা দেন তোফাজ্জল। পেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন; কিন্তু রিসিভ হয় না।
কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ ঢাকায় যে গণ্ডগোল চলছে, জানেন তোফাজ্জল। দুপুর ১টার পর কল দিতেই থাকেন। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলেন, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন।
তোফাজ্জল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আরও কয়েকবার কল দেন, রিসিভ হয় না। শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে চলে ঘামের স্রোত। পরিচিত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতক্ষণে নির্মম সত্য জানলেন, ততক্ষণে সব শেষ!
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত-বাবা, আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না। আমার ছেলে কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি মাঠে কাজ করে খাই। আমিও কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তখন ভয়ে কথা বলতে পারিনি। ছেলে হত্যার পর থেকেই আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। আল্লাহকে বলেছি, আল্লাহ তুমি দেশবাসীকে এই জালিম সরকারের হাত থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনে আমি খুশি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার দাবি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হোক। কারণ তার নির্দেশেই আমার ছেলেসহ শত শত ছেলে-মেয়েকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘অনেকেই আসছেন আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য। আমার ছেলেকে ভালোবেসেই তারা আমার কাছে আসছেন। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, আমার আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। আমাকে আর্থিক সহযোগিতা না দিয়ে সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। সম্ভব হলে আমার ছেলের নামে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করবেন। যাতে পরকালে আমার ছেলে শান্তি পায়।’