কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়া সেই ১৬ বছরের শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমের জামিন দিয়েছেন আদালত।
কারাগার থেকে বের হলে মাহিম জড়িয়ে ধরে পরিবারের সদস্যদের কান্না। ছবি: সময় সংবাদ |
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল পাঁচটায় ১৩ দিন কারাবন্দি থেকে জামিনে বের হলে তাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদেন মা, বোনসহ পরিবারের সদস্যরা। এসময় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
এর আগে দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ জামিন দেন। পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া পর্যন্ত জামিন দেন আদালত। তবে জামিন শুনানির ধার্য তারিখ ৪ আগস্ট হলেও শিশু হওয়ায় আগাম জামিন দিয়েছেন রংপুর নারী শিশু আদালত।
জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাহিমের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম ও বাহারুল ইসলাম।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে কোটা আন্দোলনে বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করার অভিযোগে আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আটক করে বিজিবি। পরে তাজহাট থানায় কোটা আন্দোলনের সময় বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার মামলায় আটক দেখিয়ে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে দেন।
মাহিমের বোন সানজানা আখতার বলেন, ‘আমার ভাই জামিন পেয়েছে, এটাই আমাদের কাছে সবচাইতে স্বস্তির খবর। এব্যাপারে পুলিশ আমাদের যথেষ্ট সহোযোগিতা করেছে। কিন্তু সারাজীবনের জন্য একটা কষ্ট তৈরি হলো। সে যে ট্রমায় গেল এর দায়িত্ব কে নেবে। পুলিশের কাছে অনুরোধ, এসব বিষয়ে পুলিশ যেন দায়িত্বশীল আচরণ করে। আর যেন কেউ এমন হয়রানির শিকার না হন।’
মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহাজালাল বলেন, ‘জামিন হয়েছে। এখন নিঃশর্ত মুক্তি চাই। পুলিশ কমিশনার কথা রেখেছে। কমিশনারের কাছে আমার আবেদন, আমার ছেলেকে একেবারে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।’
মা আঞ্জুমান আরা ময়না বলেন, ‘১৪ দিন ধরে ছেলের মুখ দেখি না। আজকে জামিন দিয়েছে। সরকারের কাছে আবেদন, আমার ছেলে যেন কোনো মামলার আসামি না থাকে। ওকে যেন বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।’
মাহিমের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম বুলেট বলেন, ‘আগামী ৪ আগস্ট তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছিল আদালত। কিন্তু শিশু হওয়ায় আগাম জামিনের আবেদন করায় আদালত জামিন দিয়েছে। সেই সঙ্গে মাহিমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার ভাইয়ের গ্রেফতার ও কারাগারে থাকার বিষয়ে একটি মানবিক স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিলে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরে গতকাল ৩১ জুলাই ভুক্তভোগীর পরিবারকে ডেকে মামলার ধার্য তারিখের আগে (আজ) জামিন শুনানির জন্য বলেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার। সেই অনুযায়ী আজ শুনানী শেষে জামিনে মুক্তি মিলে মাহিমের।
আলফি শাহরিয়ার মাহিম গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনিই রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল মহানগরীর পার্ক মোড় চকবাজার এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।